এটা তাহলে সত্যিই নতুন ইউনাইটেড

139

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

ম্যাচের ৩৫ মিনিটে দূরের পোস্টে শট নিয়ে আন্তনি গোল করার পরই ভিডিও ক্যামেরা খুঁজে নেয় বেঞ্চে থাকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে অভিষেকেই আন্তনির গোল এবং তা দেখে রোনালদোর হাততালিটার চাইলে একটা প্রতীকী অর্থও করা যায়।

এ যেন এক যুগ থেকে অন্য যুগে উত্তরণ। পুরোনোর হাত থেকে ব্যাটন নিয়ে নতুনের যাত্রা।

ব্রাইটন ও ব্রেন্টফোর্ডের মতো মাঝারি মানের দলের কাছে হারের পর ইউনাইটেডের ফিরে আসাটা মোটেই সহজ ছিল না। ইউনাইটেড ফিরেছে পরের চারটা ম্যাচ টানা জিতে। যার দুটি আবার লিভারপুল ও আর্সেনালের মতো পরাশক্তির বিপক্ষে। তবে এখানেই থামতে চান না টেন হাগ, যেতে চান অনেক দূর।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও আর্সেনালের গত কয়েকটা মৌসুম কেটেছে ভুলে যাওয়ার মতোই। পিঠ ঠেকানোর জন্য দেয়ালও আর অবশিষ্ট ছিল না। আর্সেনাল তবু মিকেল আরতেতার ওপর আস্থা রেখেছে, ইউনাইটেড সেটাও পারছিল না। ২০১৩ সালে স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন দায়িত্ব ছাড়ার পর সাতজন কোচ বদলেছে ইউনাইটেড। কাউকে নিয়েই সন্তুষ্ট হতে পারছিল না ইংল্যান্ডের সবচেয়ে সফল ক্লাবটি।

হাগের শুরুটাও স্বস্তির ছিল না। প্রাক্‌–মৌসুম প্রস্তুতিটা ভালোই হয়েছিল ইউনাইটেডের, কিন্তু ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর দলবদল ইস্যুতে টালমাটাল হয়ে তিনিও মনোযোগ হারিয়ে ফেলেন। যার ফলাফল প্রথম দুই ম্যাচে হার।

উত্তর কিছুটা লিভারপুলের বিপক্ষে ম্যাচেই দিয়েছেন মার্তিনেজ। যে লিভারপুলের কাছে এই ওল্ড ট্রাফোর্ডেই গত মৌসুমে ৫-০ গোলে হেরেছিল ইউনাইটেড, সেই দলের সঙ্গে একই মাঠে এবার দেখা গেল অন্য এক ইউনাইটেডকে।

লিভারপুলের দুর্বল মাঝমাঠের সুযোগ নিয়েই দুর্দান্ত প্রেসিং ফুটবল খেলে টেন হাগের দল। যে কারণে তিনি ৩৭ বছর বয়সী রোনালদোকেও একাদশের বাইরে রাখেন। যার ফলও এসেছে হাতেনাতে। ২-১ গোলে লিভারপুলকে হারিয়ে টেন হাগও পেয়ে যান ইউনাইটেড কোচ হিসেবে প্রথম জয়। তবে সেটা ছিল শুধু শুরু।

সাফল্যের খোঁজে ইউনাইটেড অবশ্য দলবদলে অর্থও ঢেলেছে অঢেল। মার্তিনেজ, আন্তনি ছাড়াও দলে আনা হয় কাসেমিরোর মতো পরীক্ষিত তারকাকে। ওল্ড ট্রাফোর্ডে জয়ের পর সাউদাম্পটন ও লেস্টারকে হারিয়ে ছন্দে ফেরে ইউনাইটেড।

তবে টেন হাগের আসল পরীক্ষাটা ছিল আর্সেনালের বিপক্ষে। টানা পাঁচ ম্যাচ জেতা মিকেল আরতেতার দল শোনাচ্ছিল দিনবদলের গান। উড়তে থাকা সেই আর্সেনালের বিপক্ষে টেন হাগের ইউনাইটেড কেমন খেলে, সেটাই দেখার অপেক্ষা ছিল। আর্সেনাল খারাপ খেলেনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয় হয়েছে ইউনাইটেডের হার না মানা ফুটবলের। আক্রমণ ও বলের দখল—দুই জায়গায় পিছিয়ে থাকার পরও প্রতি–আক্রমণনির্ভর ফুটবলে ঠিকই বাজিমাত করেছে ইউনাইটেড। সব মিলিয়ে এ যেন সত্যিই নতুন এক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড!

সেদিন হারের জন্য রেফারিং ও ভিএআরকে দায় দিয়েছেন আর্সেনাল কোচ আরতেতা। কিছুটা হয়তো সত্যি। তবে তাতে ইউনাইটেডের কৃতিত্ব কমবে সামান্যই। অভিষিক্ত আন্তনি মুগ্ধ করেছেন, দারুণ খেলেছেন মার্কাস রাশফোর্ড।

দুজনকেই তাই প্রশংসায় ভাসিয়েছেন টেন হাগও, ‘তারা দুজনই দারুণ খেলেছে। আমাদের আক্রমণভাগ সত্যিই অনেক শক্তিশালী। তারা একই সঙ্গে সৃষ্টিশীল ও গতিময়। প্রথমবারের মতো তারা একসঙ্গে খেলেছে এবং দুর্দান্ত পারফর্ম করেছে।’

মৌসুমের শুরুতেই লিভারপুল ও আর্সেনালকে হারানোর পর সমর্থকেরা এখন বলতে গেলে উড়ছেন। তবে টেন হাগ চাইছেন মাটিতেই পা রাখতে। এখনো উন্নতির অনেক জায়গা দেখছেন ইউনাইটেড কোচ, ‘আমরা মাত্র শুরু করেছি। অনেক দূর যেতে হবে। আরও ভালো খেলতে হবে। কারণ, শুধু ভালোতেই আটকে থাকা যথেষ্ট নয়।’

ইউনাইটডের মতো দলের লক্ষ্যটা যে আরও বড়, সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন টেন হাগ, ‘এটা একটা প্রক্রিয়ার ব্যাপার। আপনাকে উন্নতি করতে হবে, প্রতিদিন মানদণ্ডটা আরও উঁচু করতে হবে। এটাই আমার চাওয়া, আমার কোচদের চাওয়া। আমি মনে করি, আমার দলে থাকা খেলোয়াড়দেরও সেই চাহিদা আছে। দলে এমন অনেক খেলোয়াড় আছে, যারা অনেক শিরোপা জিতেছে। ড্রেসিংরুমে তাদের সেই মানসিকতা ছড়িয়ে দিতে হবে।’

Get real time updates directly on you device, subscribe now.